বর্তমানে গতিশীল বিশ্বের জটিল অর্থনৈতিক সমাজে একমালিকানা ব্যবসায়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আগের দিনে আত্মনির্ভরশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় মানুষ যখন শুধু প্রয়োজনীয় জিনিস উৎপাদন করে তাদের প্রয়োজন মিটাতো তখন একমালিকানা ব্যবসায়ের ততটা গুরুত্ব ছিল না। কিন্ত কালের বিবর্তনে সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে মানুষের চাহিদা বৃদ্ধি, বৃহদায়তন উৎপাদন, যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি ইত্যাদি করণে একমালিকানা ব্যবসায়ের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিন্মে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে একমালিকানা ব্যবসায়ের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো:
১। সহজ গঠন (Easy Formation): একমালিকানা ব্যবসায়ের গঠন প্রণালি অত্যন্ত সহজ । বৃহদায়তন ব্যবসায়ের গঠন ও পরিচালনা পদ্ধতি খুবই জটিল এবং আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয়। এ কারণে এ ধরনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সবাই পছন্দ করে।
২। কম ঝুঁকি (Small risk): একমালিকানা ব্যবসায় দায় অসীম হলেও ঝুঁকির পরিমাণ কম । সতর্কতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলে ঝুঁকিকে সাফল্যের হাতিয়ারে রূপান্তরিত করা যায় ।
৩। মূলধনের স্বল্পতা (Limited capital): বাংলাদেশের অধিকাংশ লোকই দরিদ্র। তাদের সঞ্চয় ও মূলধনের পরিমাণ খুবই কম। তাই একমালিকানা ব্যবসায় তাদের পছন্দের তালিকায় অগ্রাধিকার পায় ।
৪। সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি (Increase of saving and investments): শহর ও গ্রামগঞ্জে ব্যাপক জনগোষ্ঠী এরূপ ব্যবসায় গড়ে তোলার মানসে তাদের ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে একত্রিত করে এ ধরনের ব্যবসায় গঠন করে থাকে। যা দেশের জন্য মূলধন গঠন এবং বিনিয়োগ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।
৫। জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন (Raising standard of living): জাতীয় আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হয়ে থাকে। অন্যদিকে চাহিদা অনুযায়ী পণ্যদ্রব্য সরবরাহ করে এ ব্যবসায় মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে ।
৬। অনুন্নত অর্থনৈতিক অবস্থা (Undeveloped economy): বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা মোটেই উন্নত নয়। অভ্যন্তরীণ ও স্থানীয় চাহিদা পূরণের জন্য প্রধানত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পণ্য উৎপাদন করা হয়। বৃহদায়তন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজি ও প্রযুক্তির ঘাটতি থাকায় ক্ষুদ্ৰায়তনের একমালিকানা ব্যবসায়ই এদেশে জনপ্রিয় ।
৭। ব্যাপক সেবা প্রদান (Rendering of greater service): স্বল্প মূলধন নিয়ে অতি সহজে এ ব্যবসায় শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জের সর্বত্র গড়ে ওঠে। তাই প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবাসামগ্রী সহজে ভোক্তা সাধারণের হাতে তুলে দিয়ে এ ব্যবসায় ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে সেবা প্রদান করতে পারে।
৮। কর্মসংস্থান (Employment): এককভাবে প্রতিটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে কম সংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান হলেও সমষ্টিগতভাবে অধিক সংখ্যক লোকের বেকার সমস্যা দূরীকরণে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।
৯। সম্পদের সুসম বণ্টন (Proper distribution of wealth): একমালিকানা ব্যবসায় দেশের যেকোনো স্থানে গড়ে উঠতে পারে বলে সম্পদের সুসম বণ্টনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।
১০। জাতীয় আয় ও সম্পদ বৃদ্ধি (Increase of national income and wealth): সম্পদের সুসম বণ্টনের ফলে ব্যক্তিগত আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির পাশাপাশি জাতীয় আয় ও সম্পদ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। পরিশেষে বলা যায় যে, একমালিকানা ব্যবসায়ে মানুষের রুচি, পছন্দ, ইচ্ছা ইত্যাদিকে প্রাধান্য দেয়া হয় বলে বৃহদায়তন ব্যবসায়ের পাশাপাশি এটি আজও টিকে আছে । তাই একমালিকানা ব্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম ।